আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতিতে কি ভাবে পাক ছাফ দিতে হয় তার ব্যবস্থাও আল্লাহপাক পবিত্র কালামের মাধ্যমে বলিয়াছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতাআলা বলেছেন: আল্লাহতাআলা পরিষ্কার পরিছন্নতাকারীকে ভালোবাসেন। মহানবী (সা:) ও পাক পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। নামাজ আদায় করিবার জন্য যেসকল বিধি বিধান রহিয়াছে, ইহার মধ্যে পরিষ্কার পরিছন্নতা অন্যতম।
পবিত্রতার প্রকারভেদ:
- দৈহিক পরিচ্ছন্নতা
- পরিধেয় বস্ত্রাদি
- নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থান
দৈহিক পবিত্রতা
মানুষ পৃথিবীতে নানা প্রকারের কাজ করিয়া থাকে। কেহই কর্মহীন অলস জীবন যাপন করিতে পারে না। তাই কর্মময় জীবনে কাজ করিবার সময় আমাদের হাত, পা, কান, মুখমন্ডল প্রভৃতি ময়লাযুক্ত হয়। আর এই সকল অঙ্গ-পতঙ্গ ওযু করার মাধ্যমেই পরিষ্কার করা হয়। মুছাল্লী যখনই নামাজের জন্য অগ্রসর হইবে তখনই প্রাথমিক প্রস্তুতিতে তাহার দেহকে পবিত্র করতে হইবে। তাহা না হইলে তাঁহার নামাজ আদায় হইবে না। এমনকি মল – মিত্রাদি ত্যাগ করার পর ঢিলা কুলুক ব্যবহার করিয়া নাপাকি হইতে পূর্ণভাবে পবিত্রতা অর্জন করাও অপরিহার্য কর্তব্য। এইভাবে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধৌত করিয়া আমরা আমাদের দেহকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি।
পাঁচবার নামাজের জন্য মুখমন্ডল ধৌত করিলে চেহারায় সৌন্দর্য ও কামনীয় ভাব ফুটে ওঠে। কুলি করিবার সময় মুখ গহবর, দন্তরাজি, দাঁতের মাড়ি, জিব্বা, প্রভৃতি পরিষ্কার করিয়া দুর্গন্ধ দূর করা হয়।
দন্তরাজিকে নিয়মিত ভাবে পরিষ্কার করিলে
- চক্ষের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়
- দন্তপাটি সুদৃঢ করে তোলে
- হজম শক্তি সঠিক থাকে
- মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে
- কফ দূর করে
- মুখে সুগন্ধি সৃষ্টি করে
- দেহের সজীবতা আনয়ন করে
- আয়ু বৃদ্ধি করে
রীতিমতো দৈনিক পাঁচবার নামাজের পূর্বে মেসওয়াক করিলে ঐসকল উপকার লাভ করা সম্ভব।
অন্যদিকে ঘাড় মাসেহ করা কর্ণদ্বয়ের ভিতর ও বাহির মুছিয়া ফেলা এবং মাথার উপরিভাগ মুছিয়া ফেলা ওযুর অংশবিশেষ। ক্লান্ত শরীরের দেহ ভিজা হাত ধারা উপরোক্ত অঙ্গগুলি স্পর্শ করিলে সারা শরীরে খুশির লহরী খেলিয়া যায়। ভিজা আঙ্গুলি কর্ণ কুহরে প্রবেশ করিয়া ভিতরে ময়লা পরিষ্কার করিবার কি সুন্দর ও সহজ পদ্ধতি। নামাজ ব্যতীত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের কোন বইতে এরূপ পদ্ধতি পাওয়া যায় না।
আমাদের চারদিকে বাতাসে সর্বদা রোগজীবাণু ভাসিয়া বেরায়। উহারা নাক, কান ও মুখ গহ্বরে ঢুকে এবং সুকৌশলে আমাদের দেহের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে। অতএব ঐগুলিকে অজুর সময়ে ধৌত করিলে রোগ আক্রমণের আর তেমন কোনো আশঙ্কা থাকে না।
নাসিকা গর্তে অনিষ্টকর ধুলাবালি ময়লা জমিয়া থাকে বলেই অজু করিবার সময় ভিজা আঙ্গুলী নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করিয়া পরিষ্কার করার ব্যবস্থা দেওয়া হইয়াছে।
এমনভাবে নামাজের বস্ত্রাদি অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হইবে। ইহা ছাড়া অজু দ্বারা শক্তি দীর্ঘ ও স্থায়ী হয়। অজু নামাজী ব্যক্তির দেহে আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম। কেননা,
- অজু স্নায়ু ও মস্তিষ্কে টনিকের কাজ করে।
- ওযুর পর শরীরটা হালকা বোধ হয়।
- ইহা মনকে উৎসাহ ও উদ্যম আনয়ন করে।
- কামশক্তি কে দীর্ঘস্থায়ী করে।
- শরীরের বাড়তি তাপ সরিয়া যায়।
- মস্তিষ্কের ভ্রান্তি দূর করে।
- স্নায়ু ও চুলের গোড়া শক্ত করে।
- রক্ত চলাচল সহজ হয়।
এই সকল কারণেই মনে হয় হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন যে, অজু মোমিন লোকের জন্য হাতিয়ার স্বরূপ।