আসসালামু আলাইকুম বাংলা ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম
এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো।
আমাদের অনেকের ধারণা টেক্সটাইলে আবার কিসের ইঞ্জিনিয়ারিং। মানে হচ্ছে টেক্সটাইল মানে জামাকাপড় জামাকাপড়ের মধ্যে আবার কিসের ইঞ্জিনিয়ারিং। বর্তমানে যাদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণের জ্ঞান নেই তারাই এরকম কথা বলে কারণ টেক্সটাইল বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি শিল্প যা বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর ভালো ভূমিকা রেখেছে।
আবার অনেকেই ভাবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মানে, টেইলার গার্মেন্টস শ্রমিক ইত্যাদি ভুল ধারণা অনেকেই পোষণ করে থাকে। কিন্তু আসলে মূল জিনিসটি অন্যরকম যেমন একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারকে মেশিন সেটআপ থেকে শুরু করে, প্রসেস কন্ট্রোল, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, মেইনটেনেন্স এবং শিপমেন্টের আগ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করাই একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার এর কাজ।
চলুন টেক্সটাইল সেক্টর সম্পর্কে অল্প কিছু ধারনা নেয়া যাক
আমাদের বাংলাদেশের টেক্সটাইল সেক্টর বিশাল বড়। আপনি বিশ্বের মধ্যে যত বড় বড় ব্রান্ড দেখতে পান যেমন H&M, Levi’s, Zara, Armani, Tommy ইত্যাদি সবগুলো ব্র্যান্ড ই বাংলাদেশের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। প্রতিটি বায়ারের ই এই নির্দিষ্ট অনেক রিকোয়ারমেন্ট থাকে আবার বিভিন্ন সময়ে পোশাকের মধ্যে বিভিন্ন কিছু চেঞ্জ ইত্যাদি করা হয়। এই রিকোয়ারমেন্ট গুলো কমপ্লিট করার জন্য দরকার দক্ষ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের। এখন আশা করা যায় যারা এই সম্পর্কে জানে না তাদের ভুল কিছুটা হলেও ভেঙেছে।
যারা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ইচ্ছুক অথবা পড়তে চায় তারা অনেক প্রশ্নই করে থাকে তার মধ্যে একটি কমন প্রশ্ন হল, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং তো করবো কিন্তু কোন বিষয় নিয়ে করলে বেশি ভাল হবে। আসলে এটার উত্তর আমি কিভাবে দিব প্রতিটি ডিপার্টমেন্টই অনেক ভালো। প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট/সেকসন মধ্যেই ভালো ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। তারপরেও একবার হালকা করে ঘুরে আসা যাক কোন ডিপার্টমেন্ট কেমন।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মধ্যে চারটি ভাগ রয়েছে এই চারটি ভাগের মধ্যে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার যেকোনো বিষয়ের উপর এক্সপার্ট হয়ে উঠতে পারে।
- প্রথম হলো ইয়ার্ন মেনুফ্যাকচারিং ইয়ার্ন মেনুফ্যাকচারিং এর কাজ হল ফাইবার বা তুলা থেকে সুতা উৎপন্ন করা।
- দুই নম্বরে হলো ফেব্রিক মেনুফাকচারিং ফেব্রিক মেনুফ্যাকচারিং এর কাজ হল সুতা থেকে ফেব্রিক বা কাপড় উৎপন্ন করা।
- তিন নাম্বার হল ওয়েট প্রসেসিং, ওয়েট প্রসেসিং এর কাজ হল ফেব্রিক রং করা অর্থাৎ ডাইং প্রিন্টিং ফিনিশিং ইত্যাদি ওয়েট প্রসেসিং এর মধ্যে পড়ে।
- চার নাম্বারে হলো, অ্যাপারেল মেনুফ্যাকচারিং, এবারের ম্যানুফ্যাকচারিং এর কাজ হল ফিনিশড করা ফেব্রিককে পোশাকে রূপান্তর করা যাতে করে পোশাক পরিধানযোগ্য হয়।
এখন প্রশ্ন হল কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়লে বেশি ভালো হবে। এই প্রশ্নটা মূলত নির্ভর করে যে ইঞ্জিনিয়ারিং করবে তার উপরে। মূলত প্রতিটা ডিপার্টমেন্টটি তার নিজের জায়গায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমি শুধু আপনাদেরকে চারটা ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে একটু বিস্তারিত ধারণা দিতে পারব।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ Youtube Video
ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং
ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং তুলনামূলকভাবে অন্যান্য সেক্টরের থেকে ইয়ার্ন মেনুফ্যাকচারিং সেক্টর এর কাজ একটু কঠিন। ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন তুলনামূলকভাবে ভালই। প্রতিটি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারই তার পছন্দমত সেক্টরে চাকরি করে মজা পায়। ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং এর কাজ হল তুলা থেকে সুতা উৎপন্ন করা। তুলা থেকে সুতা উৎপন্ন করার যে প্রসেস এটি মূলত লম্বা একটি প্রসেস এই প্রসেসটি নিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে এবং ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও এবং কনটেন্ট রয়েছে আপনি চাইলে দেখে আসতে পারেন।
ফেব্রিক মেনুফাকচারিং
ফেব্রিক মেনুফাকচারিং এর চাকরি মূলত আরামের চাকরির মতন। ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং সাবজেক্টটি মূলত টেকনিকাল এই ফেব্রিকের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে বুঝলেই চাকরিটি মজার চাকরিতে পরিণত হবে। যেহেতু প্রতিটি ফেব্রিক মেশিন দ্বারা তৈরি হয় তাই মেশিন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ফেব্রিক মেনুফ্যাকচারিং এর মধ্যে মূলত দুইটি ভাগ রয়েছে একটি হচ্ছে নিটিং আরেকটি হল উইভিং। এই দুইটি সেক্টরের মধ্যে একটি সেক্টরের মধ্যে শব্দ কম যেমন নিটিং সেক্টরের শব্দ কম হবে এবং উইভিং সেকশনে শব্দ অনেক বেশি হবে। এখন যারা যারা ফেব্রিক মেনুফ্যাকচারিং নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করতে চায় তারাই তো এই ডিসিশনটা নিবে যে সে নিটিং এর উপর বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করবে নাকি উইভিং এর উপর বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।
ওয়েট প্রসেসিং
টেস্টারের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হচ্ছে ওয়েট প্রসেসিং। যদি কেউ ওয়েট প্রসেসিং সাবজেক্ট নিয়ে পড়ে ভালো কিছু করতে চায় তবে তার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। কারণ এই সেকশনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে টেক্সটাইলের। তাই সব থেকে বেশি বেতন হয়ে থাকে এই সেক্টরের ইঞ্জিনিয়ারদের।
ওয়েট প্রসেসিংয়ের কাজ মূলত ক্যামিকেল রং ইত্যাদি। কাপড় কোনটা কখন কি রঙে কতটুকু রঞ্জিত হবে তাও প্রসেসিং নির্ধারণ করে। কাপড় যখন ফিনিশড করা হয় তখন ওয়েট প্রসেসিং এর ভূমিকা কম নয়। তাই টেক্সটাইল সেক্টরের মধ্যে ওয়েট প্রসেসিং এর গুরুত্ব অনেক বেশি।
অ্যাপারেল মেনুফ্যাকচারিং
অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং হলো বায়ারের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী পোশাক তৈরি করা। বিভিন্ন বায়ার বিভিন্ন রকম রিকোয়ারমেন্ট দেয় এ রিকোয়ারমেন্ট কে ফলো করে পোশাক তৈরি করাই হচ্ছে অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং এর কাজ। এই কাজ ভালো এবং মজার কাজ। এখানে চাইলে আপনি অনেক বড় বড় বায়ারের সাথে ও কমিউনিকেশন তৈরি করতে পারেন যার দরুন আপনার ভবিষ্যৎ চাইলে অনেক বড় কিছু করতে পারবেন। তার জন্য অবশ্যই আপনাকে ডিফারেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ জানতে হবে যেমন :- ইংরেজি, হিন্দি,চাইনিজ, জাপানিজ ভাষা।
অবশ্যই টেক্সটাইলের প্রতিটি সেক্টরে জব করার জন্য আপনাকে অন্যদের থেকে একটু দুরন্ত এবং চঞ্চল হতে হবে প্রতিটা কাজ বুদ্ধিমত্তার সাথে করতে হবে তাহলে আপনি টেক্সটাইল সেক্টরে খুব দ্রুত গ্রো করতে পারবেন।
সাধারণত আপনি দুইভাবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারবেন একটি হচ্ছে ডিপ্লোমা অন্যটি হচ্ছে বিএসসি। আপনি চাইলে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে ডিপ্লোমা করার পরে বিএসসি করতে পারেন অথবা আপনি যদি চান সরাসরি ইন্টার মানে এইচএসসি পরীক্ষা (বিজ্ঞান বিভাগ) দিয়ে বিএসসি করতে পারেন। যারা যারা সরাসরি বিএসসি করবেন তারা অবশ্যই খুব ভালোভাবে ইন্টারনি কমপ্লিট করার চেষ্টা করবেন। আর যারা ডিপ্লোমা করছেন বা করবেন তারা অবশ্যই ডিপ্লোমার পাশাপাশি কোন একটা চাকরি করার চেষ্টা করবেন যদিও চাকরি না করেন তাহলে ডিপ্লোমা শেষ করে ইন্টারনি করবেন খুব ভালো একটা কোম্পানিতে তারপর কোন একটা কোম্পানিতে জব পাওয়ার পরে বিএসসি করবেন।
চার বছরের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এ তিন বৎসর সবার সাবজেক্ট একই রকম থাকবে। চতুর্থ বছরে গিয়ে সেক্টরে সেক্টরে আলাদা আলাদা করে ভাগ হয়ে যাবে যার যেই সেক্টর বেশি পছন্দ সে ওই সেক্টর নিয়ে পড়াশোনা করবে। শুরুর তিন বছর সবাইকেই টেক্সটাইল সম্পর্কে বেসিক নলেজ দেওয়া হবে প্রতিটি সেক্টরের ওপর শেষের দিকে গিয়ে যে বিষয় সম্পর্কে পড়তে চায় ওই বিষয় সম্পর্কে এডভান্স লেভেলে জানতে পারবে।
তবে একটা জিনিস সবসময় মাথায় রাখবেন টেক্সটাইল জগতে সার্টিফিকেটের দাম অভিজ্ঞতার থেকেও বেশি। কারণ দেখা যায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করতে করতে তাদের অভিজ্ঞতা অনেক বেড়ে যায় কিন্তু উপরের তার বস থাকে নতুন শেষ করা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার যার অভিজ্ঞতা প্রায় নেই বললেই চলে। এই জিনিসটা মাথায় রেখে যারা যারা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করেছেন অথবা করবেন তারা অবশ্যই চাকরির পাশাপাশি বিএসসি টা করে নেবেন।
কনটেন্ট সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।