নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় হাদিসেও একাধিক নির্দেশন ও নির্দেশনা এসেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। তার সম্মান ও সবার থেকে বেশি। এই মর্যাদা সঠিক রাখার জন্য ইসলাম ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করার ক্ষেত্রে ৬ টি বিধি নিষেধ আরোপ করেছে।
মহানবী (সা:) এর নারীদের প্রতি ৬ টি উপদেশ
- তাকওয়া অর্জন করা
- ছোট ছোট পাপ পরিহার করা
- নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায়
- শালীন ও সংযত চলাফেরা
- অল্পতুষ্টি
- পারিবারিক সুখ-দুখের অংশীদার হওয়া
তাকওয়া অর্জন করা

তাকওয়া বা খোদাভীতির অর্থ হলো, আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপ ও পাপাচার, অন্যায় ও অবিচার, মন্দ ও নিন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহর নির্দেশ মান্য করে চলা। রাসূলুল্লাহ (সা.) নারীদের তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা.) কে তিনি বলেন, ‘হে আয়েশা, তোমার জন্য আবশ্যক হলো খোদাভীতি অর্জন করা।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং. ৯৭৮)।
তাকওয়া নারীকে যাবতীয় স্খলন ও প্ররোচনা থেকে রক্ষা করতে পারে। তাকে শৃঙ্খলা পূর্ণ আদর্শ জীবনে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
ছোট ছোট পাপ পরিহার করা

নারী সমাজের অনেকের ভিতর পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা ও হিংসার প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়া সময় ও অর্থ অপচয়, টিভিও সিরিয়ালের মত অর্থহীন কাজে আসক্ত হয়ে পরে অনেক নারী যা ইহকাল ও পরকালকে ও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অনেক সময় নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) নারীদের ছোট ছোট গুনাহ পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে আয়েশা, আমল বিনষ্টকারী বিষয় (ছোট গুনাহ) থেকে বেঁচে থাকো। অর্থাৎ ছোট ছোট গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো আল্লাহ তা প্রত্যাশা করেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস,৪৩৮৪)।
ছোট ছোট মন্দ অভ্যাস ও পাপকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ এর পরিণতি ভয়াবহ। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, ‘আজ তোমরা কোন কোন কাজকে চুলের চেয়েও ছোট মানে (তুচ্ছ অর্থে) মনে করো, অথচ আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যুগে তাকে বড় অপরাধ মানে (শাস্তিযোগ্য) অপরাধ মনে করতাম।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস নং.৬৩)
নির্দিষ্ট সময় নামাজ আদায়

ইসলাম নারীকে ঘরে নামাজ আদায় করতে উৎসাহিত করেছেন। তবে ইসলামিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, নারী যদি নামাজের সময় এর প্রথম ভাগে সুন্দর ভাবে নামাজ আদায় করে, তাহলে জামাতে নামাজ আদায়ের সওয়াব পাবে। তাই কাজের অজুহাতে অথবা অলসতা করে মুমিন নারী নামাজকে কাজা করবে না, বরং সময় মত নামাজ আদায় করবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, পর্দা রক্ষা করে, স্বামীর নির্দেশ মানে, তবে নারী জান্নাতে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং. ৪১৬৩)
শালীন ও সংযত চলাফেরা

ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে শালীনভাবে চলাফেরা করার নির্দেশ দিয়েছে। নারী – পুরুষ সবার জন্যই বলা হয়েছে লজ্জা ঈমানের অঙ্গ তবে নারীর প্রতি যেহেতু পুরুষের আকর্ষণ অনেক বেশি প্রবল তাই নারীকে নারীসুলভ সৌন্দর্য প্রদর্শন না করার নির্দেশ দিয়েছে অশ্লীল পোশাক ও চাল-চলন পরিহার করতে বলেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ, হয়েছে ‘তোমরা ঘরে অবস্থান করো এবং জাহিলি বর্বর যুগের মত নিজেদের প্রদর্শন করো না।’ (সূরা আহযাব, আয়াত নং. ৩৩)
নারীর ঘরের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ হলো, সে বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাবে না। প্রয়োজনে বিয়ের হলে শালীন পোশাকে বের হতে হবে এবং সংযতভাবে চলাফেরা করবে। নিজের দৃষ্টি অবনত রাখবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, নারীদের বলে দিন, ‘যেন তারা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে। সাধারনত যা প্রকাশ পায়, তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন ঘাড় ও বুক মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে।’ (সূরা : নূর, আয়াত নং.৩০-৩১)।
অল্পতুষ্টি

অল্পতুষ্টি অর্থাৎ অল্পতেই সন্তুষ্টি। আমাদেরকে ইসলাম অল্পতুষ্টি শিক্ষা দেয়। ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা। সবাই যে যার যার বর্তমান অবস্থাতেই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করুন। মূলত এটাই হচ্ছে অল্পতুষ্টি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জাগতিক বিষয়ের নিম্নস্তরের দিকে, পরকালীন বিষয়ে উচ্চস্তরের দিকে তাকিয়ে অনুপ্রাণিত হতে বলেছেন।
অন্য কারো সাথে তুলনা করে নিজে কখনো দুঃখ হতাশা প্রকাশ করবেন না। অনেক সময় অন্যের সাথে তুলনা করে নিজের চাহিদা পূরণ করার জন্য সুদ ঘুষের মত পাপ কাজের সাথে লিপ্ত হয়। এক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন “তোমরা ধৈর্য্য ধরো”
পারিবারিক সুখ-দুঃখের অংশীদার

ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের পোশাকতুল্য বলেছেন, যেন তারা একে অপরের সুখ দুখে অংশীদার হয়। স্বামীর সুখে-দুখে স্ত্রী এবং স্ত্রীর সুখে-দুখে স্বামী একে অপরের অংশীদার হিসেবে পাশে থাকবে এটা ইসলামের নির্দেশনা।