যা যা জানতে পারবেন
- কুরবানি কার উপর ওয়াজিব?
- কেমন পশু দিয়ে কুরবানি দিবে?
- এক পশুর মধ্যে কয়জন অংশীদার হতে পারবে?
- কুরবানি ও আকিকা একই পশুতে দেওয়া যাবে কিনা?
- কুরবানি করার পদ্ধতি কি?
- গোশত কিভাবে বন্টন করতে হয়?
- কুরবানি গোশত খাওয়া জমিয়ে রাখা এবং কুরবানীর গোস্ত দিয়ে মেহমানদারি করা, হাদিয়া দেওয়া বা সদকা করার বিধান কি?
- কুরবানির পশুর গোশত, চর্বি, চামড়া ইত্যাদি বিক্রি করা যাবে কি?
- হালাল পশুর কি কি খাওয়া নিষেধ?
- কুরবানির দিনের করণীয় কি কি?
- আরো জানতে পারবেন তাকবিরে তাশরিকের কি ধরনের বিধান রয়েছে? তাকবিরে তাশরিকের সময়কাল অর্থাৎ কোন দিন থেকে কোন দিন পর্যন্ত?
কুরবানি কার উপর ওয়াজিব?
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
টাকা পয়সা, সোনা রুপা, অলংকার, বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
যৌথ পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের উপর ভিন্ন ভিন্ন কুরবানি করা ওয়াজিব। এক্ষেত্রে যৌথভাবে সবার পক্ষ থেকে একজনের নাম দিয়ে কুরবানি করলে কারো কুরবানি আদায় হবে না।
কুরবানির নেসাব ৫২ তোলা রুপা, বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে ১ তোলা রুপার দাম ১২০০৳, ৫২.৫ × ১২০০ = ৬৩০০০/- টাকা ব্যায়ে পরিমাণ সম্পদ। — (বাদায়েউসে সানাযে ৪/২০৫-২০৬)
কেমন পশু দিয়ে কুরবানি দিবে?
উট গরু মহিষ ছাগল ভেড়া ও দুম্বা সুস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পন্ন নর-মাদা দুটোই দ্বারা কুরবানি করা জায়েয। কুরবানির পশু সুস্থ সবল হওয়া উত্তম।
উট কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। ছাগল ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি এক বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু দেখতে এক বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারা ও কুরবানি করার সহীহ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে 6 মাস বয়সের হতে হবে। উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে কোন অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানি সহীহ হবে না। কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬)
এক পশুর মধ্যে কয়জন অংশীদার হতে পারবে?
একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানি দিতে পারবে। আর উট, গরু, মহিষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ জন শরিক হতে পারবে। তবে সাতজনের সবার অংশ সমান হতে হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস :- ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮)
কুরবানি ও আকিকা একই পশুতে দেওয়া যাবে কিনা?
কুরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তের শরিক হতে পারবে। এতে কুরবানি ও আকীকা দুটিই সহীহ হবে। শৈশবে আকীকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকিকা করা যাবে। যার আকীকা সে নিজে এবং তার মা-বাবা ও আকীকার গোশত খেতে পারবে। – (ইলাউস সুনান ১৭/১২৬)
কুরবানি করার পদ্ধতি কি?
কুরবানির পশু নিজে জবাই করা উত্তম। তবে অন্যকে দিয়ে ও জবাই করাতে পারবে। ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা। এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই না করা। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে প্রয়োজনের অধিক কষ্ট না দেওয়া। পশুকে উত্তর-দক্ষিণ করে শোয়াবে। পশুর মাথা থাকবে দক্ষিণ দিকে। যিনি জবাই করবেন, কিবলামুখী হয়ে ” বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার” বলে জবাই করবেন।
গোশত কিভাবে বন্টন করতে হয়?
যদি শরীকে কুরবানি করা হয় তাহলে ওজন করে গোশত বন্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়। – আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১
কুরবানির গোশত খাওয়া জমিয়ে রাখা এবং কুরবানির গোস্ত দিয়ে মেহমানদারি করা, হাদিয়া দেওয়া বা সাদাকা করার বিধান কি?
কুরবানিদাতার জন্য নিজ কুরবানির গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। কুরবানির গোশতের এক-তৃতীয়াংশ গরিব মিসকিনকে এবং এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত নিজে রেখে দেওয়াও জায়েজ নয়। কুরবানির গোশত ফ্রিজে রাখা বা প্রক্রিয়াজাত করে রাখা জায়েজ। কুরবানির গোশত দিয়ে ধনী-গরীব সকলকে মেহমানদারী করাতে পারবে এবং হাদিয়া বা সদকা দিতে পারবে।
কুরবানির পশুর গোশত, চর্বি, চামড়া ইত্যাদি বিক্রি করা যাবে কিনা?
কুরবানির গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রয় করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে প্রাপ্ত মূল্য সদকা করে দিতে হবে। কুরবানির চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তাহলে বিক্রয় মূল্য পুরোটাই সদকা করা জরুরি। – ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
হালাল পশুর কি কি খাওয়া নিষেধ?
প্রবাহিত রক্ত, অন্ডকোষ, চামড়া ও গোশতের মাঝে সৃষ্ট জমাট মাংসগ্রন্থি, মূত্রথলি, পিত্ত, নর ও মাদা পশুর গুপ্তাঙ্গ। – রদ্দুল মুহতার ৬/৭৪৯
কুরবানির দিনের করণীয় কি কি?
অতি সকালে ঘুম থেকে ওঠে যাওয়া, তারপর মিসওয়াক করা, গোসল করা, খুশবো লাগানো, শরীয়তের সীমার ভিতরে যতটুকু সম্ভব সাজসজ্জা করা। তারপর সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া, পরিবার সহ অনান্য সবাই এক রাস্তায় ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় ফিরে আসা, ঈদগাহে যাওয়ার আগে কোন কিছু না খেয়ে যাওয়া, উচ্চস্বরে তাকবীর পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া, সক্ষম ব্যক্তিরা কুরবানী করা। – বেহেশতি যেওর ১/২০৫-২০৬
আরো জানতে পারবেন তাকবিরে তাশরিকের কি ধরনের বিধান রয়েছে? তাকবিরে তাশরিকের সময়কাল অর্থাৎ কোন দিন থেকে কোন দিন পর্যন্ত?
তাকবিরে তাশরিক মহিলা পুরুষ, মুকিম মুসাফির সবার উপর ওয়াজিব। ৯ই জিলহজ্বের ফজর থেকে নিয়ে ১৩ই জিলহজ্বের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। তাকবিরে তাশরিক হলো :-
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। – রদ্দুল মুহতার ২/১৮০
কলিম উল্লাহ কওমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
চর বাউশিয়া, গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ
আপনার কুরবানির গোশত এবং কুরবানির চামড়ার মূল্য কলিমুল্লাহ মাদ্রাসার এতিম ও অসহায় ছাত্রদেরকে দান করে দু জাহানের অশেষ নেকি হাসিল করুন।
যোগাযোগ :- ০১৮৭৪২৬৬৬১০