করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কাঁচামাল সংকটে পড়েছে পোশাক শিল্প কারখানাগুলো। যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তা হলে বিপাকে পড়বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প।
প্রাণঘাতী করোনা সঙ্কট এর প্রভাবে দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, আমদানি রপ্তানি খাতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, কিন্তু সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে পোশাক শিল্প।
আমাদের দেশের পোশাক বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো – চীন, ইউরোপ, আমেরিকাতে ইতিমধ্যে রপ্তানি কমে গেছে। আমাদের দেশে যে পোশাক তৈরি হয় তার ৮০ ভাগ ফেব্রিক আসে চীন থেকে কিন্তু ইদানিং করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর কারণে আমদানি কমে গেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। রীতিমতো বন্ধের পথে চীন, ইউরোপ ও আমেরিকাতে চামড়াজাত পণ্য ও পোশাক শিল্প সহ বিভিন্ন রপ্তানি।
বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে নীট ও ওভেন দুই ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়। কিন্তু করোনা সঙ্কটে ওভেন পোশাক কারখানাগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সেই তুলনায় নীট পোশাক শিল্প কারখানাগুলো উপর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম, কারণ এখন ৮৫ ভাগ সুতাই আমাদের দেশে উৎপন্ন হয়।
তবে ফেব্রিক ডাইং করার জন্য যে ক্যামিকেল এর প্রয়োজন তা প্রায় সবই চীন থেকে আসে। পোশাক শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকেসরিজ বোতাম, জিপার, লেভেল ইত্যাদি বেশিরভাগই চীন থেকে আসে। ফলে সব মিলিয়ে পুরো পোশাকশিল্প এখন সংকটের মুখে আছে।
বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে পোশাক শিল্পের মালিকরা বহুরূপী সংকট দেখতে পাচ্ছেন। সরবরাহ কমে যাওয়াতে কাঁচামালের দাম বেড়েই যাচ্ছে, যার কারণে বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ। কাঁচামালের সংকটের কারণে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের বেশিরভাগ পোশাক রপ্তানি হয় – ইউরোপ, ইটালি, জার্মান সহ আরো অনেক দেশে, ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস এর প্রভাব প্রায় বিশ্বের সব দেশেই তাই বর্তমানে যে অর্ডার গুলো আছে সবই বাতিলের মুখে। তবে এই করোনাভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব যদি বাড়তেই থাকে তাহলে আমাদের পোশাক শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
তৈরিকৃত পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমএ এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। গত মাসে আপৎকালীন তহবিল গঠন, ঋণ নিশ্চয়তা সহজ কিস্তি সহ আরো কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন তারা। লিখিত আবেদনে সংগঠনটি বলেছেন, গত বছরে চীন থেকে ১ হাজার ৩৬৩ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, তারমধ্যে টেক্সটাইল সংক্রান্ত কাঁচামাল ৫০২ কোটি মার্কিন ডলারের।
গার্মেন্টস শিল্পের ৪৬% কাঁচামাল আসে চীন থেকে। তাই করোনা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে পোশাক খাতে মারাত্মক প্রভাব পরবে। বর্তমানে চীন থেকে জাহাজ না আসতে পারার কারণে আমদানি প্রায় ৫০% কমে গেছে আগের তুলনায়।
চলমান সময়ে তৈরিকৃত পোশাকশিল্পের রপ্তানিতে খুবই মন্দাভাব চলছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ – ২০২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে গার্মেন্টস খাত থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার যা গত বছরের একই সময়ের থেকে ৫.৫৩ ভাগ কম।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে গার্মেন্টস শিল্পের ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়েছে।
টেক্সটাইল শিল্প কারখানাগুলো ক্ষতির বিষয়ে নিয়মিত তথ্য প্রদানের জন্য বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এরই মধ্যে একটি সেল খোলা হয়েছে, তবে সেল থেকে পরিপূর্ণ তথ্য আসা এখনো শুরু হয়নি।
২০১৮ -২০১৯ অর্থবছরে গার্মেন্টস রপ্তানি থেকে আয় হয় ৩৪,১৩৩.২৭ মিলিয়ন ডলার, যার পার্সেন্টেজ রপ্তানি আয়ের এর ৮৪.২১%৷ গার্মেন্টস রপ্তানি খাতে কোনো সংকট তৈরি হলে তার প্রভাব পড়বে তাই গোটা রপ্তানি বাণিজ্যে৷
করোনার কারনে সবগুলো কোম্পানির বেহাল অবস্থা।
আল্লাহ জানে কত হাজার শ্রমিক বেকার হবে।