মাসআলা
মৃত ব্যক্তি যদি পুরুষ হলে তার জন্য তিন কাপড় দেওয়া সুন্নত। যথা : ইজার, লেফাফা, কামিজ।
আর মৃত ব্যক্তি যদি মহিলা হয়, তাহলে পাঁচ কাপড় দেওয়া সুন্নত। যথা : ইজার, লেফাফা, কামিজ, সিনাবন্ধ, ঘোমটা (মাথাবন্ধ) শিশুদের জন্য একই পদ্ধতি অনুসরণযোগ্য। তবে যদি কোথাও কাপড়ের সংকট দেখা দেয়, তাহলে যেভাবেই হোক ঢেকে দাফন করা কর্তব্য। সেখানে কাপড়ের সংখ্যা বিবেচ্য বিষয় নয়। মৃত ব্যক্তির দাফন কাফনের কাপড় সাদা হওয়া বাঞ্ছনীয়, তবে যদি সাদা কাপড়ের সংকট দেখা দেয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে যে কোন রং গ্রহণযোগ্য।
মাসাআলা
মৃত ব্যক্তির গোসলদাতা তার কাজের বিনিময় গ্রহণ করতে পারবে। তবে সে সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে, ঠিক একইভাবে কবর খননকারীরাও তার কাজের মজুরি গ্রহণ করতে পারবে। তবে সেও সাওয়াবের থেকে বঞ্চিত হবে।
মাসাআলা
মৃত ব্যক্তির সতর জীবিতদের জন্য দেখা হারাম। অতএব, গোসলের সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী।
মাসাআলা
কাফনের কাপড় ঘরের পুরাতন কাপড় হলেও কোন প্রকার ক্ষতি নেই। তবে সংগতি থাকলে নতুন কাপড় দিয়েই কাফন দিবে। এতে কৃপণতা করা ঠিক নহে।
মাসাআলা
মৃত ব্যক্তির কাফনের কাপড়ে আহাদ নামা, কোন পীরের সাজরা নামা লিখা অথবা কোরআনের কোন আয়াত কালি দ্বারা লেখা জায়েজ নয়। তবে শুধুমাত্র আঙ্গুলী দিয়ে (কালি ব্যতীত) লেখাতে কোন প্রকার বাধা নেই, তবে কিছু না লিখাই উওম। কাফনের কাপড় বেঁচে গেলে সে কাপড় দ্বারা জীবিতদের জামা কাপড় বানাতে কোন প্রকার বাধা নেই।
মাসাআলা
গর্ভপাতের কারণে যে বাচ্চা ভূমিষ্ট হয়েছে, যদি সে বাচ্চার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ পরিশুদ্ধ হয়, তাহলে শুধুমাত্র কাপড়ে জড়িয়ে দাফন করবে। বাচ্চা যদি জীবিত হওয়ার পর মারা যায় তাহলে নাম রেখে গোসল করিয়ে কাফনের কাপড় পরিয়ে জানাজার নামাজ আদায় করে তবেই দাফন কার্য সম্পন্ন করবে।
মাসাআলা
ধর্মযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী জন্য কোন প্রকার গোসল নেই। তার সাথের পোশাকাদিসহ কাফন দাফন এবং জানাজার নামাজ আদায় করবে। অন্যান্য শহীদদের যেমন : পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করা, আগুনে পুড়ে, দুর্ঘটনায় পড়ে মারা যাওয়া, কলেরা, বসন্ত ইত্যাদিতে মারা যাওয়া মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিয়ে কাফন দাফন জানাজা ইত্যাদি আদায় করাবে।
মাসাআলা
সর্বাবস্থায় মৃত ব্যক্তির খাটিয়া কাঁধে বহন করা বিধেয়। তবে আত্মহত্যা দ্বারা যে ব্যক্তি মারা গিয়েছে এবং হত্যা, লুন্ঠন করতে গিয়ে মারা গিয়েছে তার খাটিয়া হাটুর নিচে করে নেওয়া বিধেয়।
[বি:দ্র] হাটুর নিচে করে নেওয়ার বিধান শরীয়তসম্মত। তবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বহু বুজুর্গানেদ্বীন বলেছেন, কাঁধে করে বহন করার জন্য।
মাসাআলা
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে আত্মীয় স্বজন অহেতুক ঝামেলা করা ওয়ারিশদের উপর জুলুম বৈ কিছু নয়। আজকাল, আত্মীয়তার বেশে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণের উপর বসে খাওয়ার রীতি সর্বত্র বিরাজমান। যা সত্যিই দুঃখজনক। এটা কখনও জায়েয নয়। বরং ভয়ঙ্কর মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
মাসাআলা
অনেক এলাকায় দেখা যায় যে, মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণকে থানা জিয়াফত করতে বাধ্য করা হয়। এটা সত্যিই এক জগন্যতম প্রথা। ওয়ারিশগণ অনেক সময় দেখা যায় যে ধারদেনা করে সমাজের চাপে পড়ে খানা জেয়াফত করে থাকেন। কিন্তু এর পরিণতি তাদের জীবনে খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এমনও দেখা গেছে যে, মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ এই খানা জিয়াফত এর চাপে পড়ে চিরতরে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়েছে। এটা একটা অমানবিক প্রথা। সমাজের এ কুপ্রথা আদর সমর্থন করা যায় না। ইসলামী শরীয়ত ও এই প্রথা সমর্থন করে না।
তবে কোন লোক যদি তার মৃত আত্মীয়ের জন্য স্বেচ্ছায় খরচাদি করতে চায়, তাতে আমাদের বাধা প্রদান করা কোনও মতেই উচিত নয়। তবে সেই খরচাদি শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির স্মরণে গরিব মিসকিনগণের জন্য হওয়াই বাঞ্চনীয়। যদি কেউ নাম ডাকের জন্য করে থাকেন, তাতে মৃত ব্যক্তির কিছুই পাওয়া হবে না এবং দাতারও কিছুই পাওয়া হবে না। নাম ছাড়ানোই হবে মাত্র।